বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

খেলনার বাক্সে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে কোটি টাকার গাঁজার চকলেট-কেক

খেলনার বাক্সে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে কোটি টাকার গাঁজার চকলেট-কেক

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে একটি পার্সেল আসে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের বৈদেশিক ডাক শাখায়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পার্সেলটি জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রোপলিটন কার্যালয় (উত্তর)। পার্সেলটি খুলে দেখা যায়, বাচ্চাদের খেলনার বাক্সে করে আমেরিকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলযুক্ত গাঁজার চকলেট ও কেক। এসব মাদকের বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা। পার্সেল জব্দ হওয়ার পর, পার্সেলের গায়ে থাকা একটি নম্বরের সূত্র ধরে এই চালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজনকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. রাসেল মিয়া (২০), রমজান মিয়া (২১) ও মো. ইমরান ওরফে রাজ (২০)। ডিএনসি আরও জানায়, পার্সেলের ভিতরে ছিল ছয়টি প্যাকেটে। যার মধ্যে ছিল টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলযুক্ত কুশ, যা আমেরিকার তৈরি। যার ওজন এক কেজি ৩০০ গ্রাম। পার্সেলে আরও ছিল আমেরিকায় তৈরি গাঁজার নয়টি চকলেট। এছাড়া ছিল আমেরিকায় তৈরি ১০টি গাঁজার কেক। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এর মহাপরিচালক (ডিজি) মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী। মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, রোববার (২১ এপ্রিল) পল্টনের পুরাতন ডাক ভবনের বৈদেশিক ডাকের সিইডি/ডিসিএল শাখা থেকে ইউএসএর ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে আসা একটি পার্সেল জব্দ করা হয়। পার্সেলে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলযুক্ত কুশ, ক্যানাবিস চকলেট ও ক্যানাবিস কেক জব্দ করা হয়।  গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিএনসি জানতে পারে যে, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বিপুল পরিমাণের মাদকের একটি পার্সেল ডাকযোগে বাংলাদেশে আসবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে ডাক বিভাগের সহযোগিতায় পার্সেলটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় পুরাতন ডাক ভবন বৈদেশিক ডাকের সিইডি/ডিসিএল শাখা থেকে পার্সেলটি জব্দ করা হয়। পার্সেলের গায়ে থাকা তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাপকের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাসেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পার্সেলটি ডেলিভারি নেওয়ার কথা ছিল তার। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার রমজান মিয়া তাকে পার্সেলটি টাকার বিনিময়ে রিসিভ করার কথা বলেন। পরে রাসেলের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রমজান মিয়াকে আশুলিয়ার আমতলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রমজান মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাকে টাকার বিনিময়ে পার্সেলটি রিসিভ করতে বলেন মো. ইমরান ওরফে রাজ। পরে রমজান মিয়ার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করে আশুলিয়ার আমতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রমজান ও রাজ একে অন্যের বন্ধু। তিনি আরও বলেন, যে প্যাকেটে করে মাদকগুলো আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছিল, সেগুলো ছিল বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেট। যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে এসব প্যাকেটে মাদক রয়েছে। গ্রেপ্তাররা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে বিদেশ থেকে গাঁজার কেক, কুশ ও চকলেট এনে রাজধানীরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হতো। বিদেশ থেকে যারা এই মাদকটি বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন, তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়াতে এ মাদক বৈধ কিংবা অবৈধ সেটি বিষয় না। বাংলাদেশে এই মাদক অবৈধ, তাই বাংলাদেশে এই মাদক পাঠানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশে এটা অবৈধ জেনেই তারা বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেটে মাদক পাঠিয়েছে। এই পার্সেলটি যেকোনো আমেরিকান নাগরিক পাঠিয়েছেন বিষয়টি এমন নয়। ওখানে বসবাসরত অন্য কোনো দেশের নাগরিকও পাঠাতে পারেন। আমেরিকা থেকে এই মাদক বাংলাদেশে কতবার এসেছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমেরিকা থেকে ঠিক কতবার এসেছে এ তথ্যটি এখনো নিশ্চিত নই আমরা। তবে, আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি যে, তারা গত এক দুই বছর ধরে এই মাদক বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানার চেষ্টা করব যে, তাদের নেটওয়ার্ক কতটুকু বিস্তৃত। এই মাদকের ব্যবহারকারী কারা জানতে চাইলে ডিএনসির ডিজি বলেন, এটা আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করব যে, কি কি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মাদক কেক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা খুবই মারাত্মক। এই বিষয়ে আরও সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তাদের আমরা জানাব। গ্রেপ্তারদের বয়স অল্প। তারা এই কোটি টাকার মাদক কীভাবে সংগ্রহ করেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মার্কেটিং অফিসার। আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করব যে, তাদের অর্থের উৎস কী এবং তারা কীভাবে অর্থ সেখানে পাঠিয়েছেন। এর সঙ্গে মানিলন্ডারিং জড়িত থাকতে পারে। আমরা এসব বিষয়ে তদন্ত করব।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন