শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

আগুনে পুড়েছে চাল, কয়লা হয়েছে ভাত

আগুনে পুড়েছে চাল, কয়লা হয়েছে ভাত

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : তপ্ত রোদ, খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে কয়েকজন বিলাপ করছেন, চারিদিকে আগুনে পোড়া গন্ধ। এখানকার অনেক মানুষের সারারাত কেটেছে খোলা আকাশের নিচে। এটি রাজধানীর বনানীর গোডাউন বস্তি। রোববারের ভয়াবহ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে বস্তির দুইশতাধিক ঘর। পোড়া বস্তির চারপাশে পড়ে আছে ঘরের পুড়ে যাওয়া টিন আর বাঁশ। বস্তিতে হাঁটতে গেলে পায়ে বাঁধছে ছাই। অনেকে নিজ নিজ ঘরের জায়গায় কোদাল দিয়ে ছাই সরাচ্ছেন। কোনো কিছু অক্ষত থাকলে তা কুঁড়িয়ে নিচ্ছেন। অনেকে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে মাটিতে পলিথিন বিছিয়ে শুয়ে আছেন।  তাদের মাঝেই দেখা গেল, পুড়ে যাওয়া এক ঘরের পাশে পড়ে আছে কয়েক কেজি চাল। তার পাশেই পুড়ে কয়লা হয়েছে আগের দিনের ভাত। পোড়া ভাতের দিকে তাকিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন রহিমা খাতুন। নিজের ঘর যখন পুড়ছে তখন বনানীর একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করছিলেন তিনি। সেই বিকেলে হঠাৎ শুনতে পান আগুনের খবর। দৌড়ে বস্তি পর্যন্ত এলেও ততক্ষণে সব শেষ। এখন বস্তির সেই ঘরের পাশে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন তিনি । তার ছেলে বাঁশ আর পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বসার জায়গা করছেন। ঢাকা পোস্টকে রহিমা খাতুন বলেন, আগুন লাগার পর দৌড়ে এসেছি কিন্তু কিছুই বের করতে পারিনি, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব। কয়েক বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। আমার মেয়ে আমার সঙ্গে থাকে। সে একটি গার্মেন্টসে কাজ করে, আগুন লাগার সময় সেও এখানে ছিল না। আর আমার এক ছেলে আছে সে মিরপুরে থাকে। বর্তমানে আমি আর আমার মেয়ে মিলে এই বস্তির ঘরে থাকতাম। কিন্তু সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ঘরের পাশে পুড়ে যাওয়া চাল ও ভাতের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, তিন কেজির মতো চাল ছিল সেগুলো পুড়ে গেছে। পাতিলে আগের দিনের ভাত ছিল সেগুলোও পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আমাদের সবকিছু পুড়ে গেছে, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটছে। রহিমা খাতুনের মত শত শত পরিবার বস্তিতে আগুন লাগার পর নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। এখন কী করবেন? কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন? সবার চোখে চিন্তার ছাপ। রোববার (২৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় বনানীর গোডাউন বস্তিতে। সোয়া ৪টায় ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় পরবর্তীতে আরও ৭টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজে যোগ দেয়। বাতাসে যেমন আগুনের তীব্রতা বেড়েছে তেমনি ঝুম বৃষ্টির কারণে মোট ১০টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সহজ হয় ফায়ার সার্ভিসের। বিকেল সাড়ে ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে ২২০ থেকে ২২৫টি ঘর পুড়েছে।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন