বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

লালমনিরহাটে বৃষ্টির অভাবে জমি ফেটে চৌচির আমন উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় কৃষকেরা

লালমনিরহাটে বৃষ্টির অভাবে জমি ফেটে চৌচির  আমন উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় কৃষকেরা
মোঃ লাভলু শেখ লালমনিরহাট থেকে।
শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই। ভরা বর্ষাকালে প্রখর রোদে জমি ফেটে চৌচির। সেচ দিয়ে আমন চাষাবাদে উৎপাদন খরচ নিয়ে শঙ্কায় লালমনিরহাটের কৃষকেরা।
কৃষকেরা জানান, প্রতি বছর আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টির পানিতে কৃষকেরা আমন ধানের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করেন। বৃষ্টির পানিতেই আমন ধান ঘরে তোলেন। ফলে সেচ খরচ না থাকায় উৎপাদন খরচও কম হয়। বোরোর তুলনায় আমন ধানের উৎপাদন খরচ প্রায় অর্ধেক। শুধু বৃষ্টির কারণে সেচ সুবিধা থাকায় উৎপাদন খরচ কম হলেও আমন চাষে কৃষকেরা  মুনাফা অর্জন করেন বেশ ভালো। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে চাষাবাদ করে কম ফলনে আমন ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরেরা।  তাই উৎপাদন খরচ নিয়ে শুরুতেই শঙ্কায় রয়েছেন।
আষাঢ় মাসে আমনের চারা লাগানো শুরু করার কথা থাকলেও এ বছর চৈত্র-বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসের ভারী বৃষ্টির কারণে দীর্ঘ অপেক্ষা করেন চাষিরা। এরপর একেবারেই বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় মাঠ শুকিয়ে আমন ক্ষেত  চৌচির হয়েছে। আষাঢ় শেষ হয়ে শ্রাবণ মাস শুরু হলেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে আমন ধান ঠিকমত লাগাতেও পারছেন না কৃষকেরা। আবার কেউ কেউ শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করে আমনের চারা লাগালেও শ্রাবণের প্রখর রোদে পানির অভাবে সেই চারা মরতে বসেছে। সেচ খরচ বাড়লে আমন চাষে ব্যাপক লোকসানের শঙ্কায় কৃষকেরা।  তাই এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৮০/৮৫ ভাগ আমনের জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকার কৃষক সোবাহান আলী (৫৮) জানান, আমনের ফলন কম হলেও বৃষ্টির পানিতে চাষাবাদ হতো বলে খরচও কম ছিল। তাই লাভের মুখ দেখা যাইত। এবার বৃষ্টি নেই ৮৫ টাকা লিটার দামে ডিজেল কিনে শ্যালো মেশিনে পানিতে চাষাবাদ করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেকটাই বাড়ছে। বাড়তি উৎপাদন খরচে আমন চাষে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। ক্ষতি হলেও কৃষক মানুষ চাষাবাদ না করে জমি ফেলে রাখলে পেটে ভাত আসবে না। তবে সরকারি প্রণোদনা বা সরকারিভাবে সেচ সুবিধার দাবি জানান তিনি।
ভুল্লারহাটের কৃষক মোসলেম উদ্দিন (৬৫) জানান, জন্মে এই প্রথম দেখলাম চৈত্রি মাসে বন্যা আর শ্রাবণ মাসে খরা। পানি কিনে বোরো চাষাবাদ করা যায়। কিন্তু পানি ক্রয় করে আমন চাষে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। তাই এখনও আমনের জমি ফাঁকা রয়েছে। লোকসান হলে তো আগামীতে চাষাবাদের মূলধনই থাকবে না।
পাটগ্রাম উপজেলার হাজিরহাট এলাকার আইনুল ইসলাম জানান , বৃষ্টির অভাবে আমনের চারা সম্পুর্ন রুপে এখনো জমিতে লাগাইনি। সেচ দিয়ে সামান্য কিছু জমিতে আমনের চারা লাগিয়েছি। সামনে বৃষ্টি হলে বাকী জমিতে চিন্তা ভাবনা করবো।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর এলাকার শরিফুল ইসলাম জানান,  প্রতি বছর বৃষ্টির পানিতে আমন চাষাবাদ করি কিন্তু এবারে দেখতেছি আবহাওয়ার ভিন্ন -প্রভাব। তাই জমিতে এখনো আমনের চারা লাগাইনি, সব জমি ফাঁকা পড়ে আছে। বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়েই আমন লাগাতে হবে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানান, চলতি মৌসুমে লালমনিরহাট জেলার ৫ টি উপজেলায় ৯৬ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। বৃষ্টি না থাকায় আমনের চারা রোপণে দেরি হচ্ছে এ জেলায়।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক হামিদুর রহমান জানান,  আমনে সেচ কম লাগে। তাই শ্যালো মেশিন বা যেকোনো উপায়ে সেচ নিয়ে আমন চারা লাগাতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখন সেচ দিয়ে চারা রোপণ করলে কিছুদিন পরে যে বৃষ্টি হবে সেই পানি আমন ক্ষেতের জন্য বড় আর্শিবাদ হয়ে দাড়াবে। তখন ফলনও অনেক বাড়বে। সুতরাং দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যেভাবেই হোক সেচ সুবিধা নিয়ে আমনের চারা রোপণে কৃষকদের আহ্বান জানান তিনি।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন